মো. সাইফুল ইসলাম, জেলা প্রতিনিধি, শেরপুর।
করোনো পরিস্থিতিতে গত বছরের ১৬ মার্চ সরকার কর্তৃক সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর ফলে বন্ধ হয়ে যায় দেশের সকল কোচিং সেন্টার ও কিন্ডারার্টেনগুলোও। বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল এন্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের সভাপতি ইকবাল বাহার চৌধুরীর মিডিয়ায় দেয়া তথ্যমতে, ৬০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় ২০ লাখ শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারী করোনোকালীন সময়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে।
সারাদেশের ন্যায় জেলার শ্রীবরদী উপজেলার কিন্ডারগার্টেন গুলোর অবস্থা আরও ভয়াবহ। প্রত্যন্ত ও পাহাড়ী অঞ্চল হওয়ায় এমনিতেই এই জনপদ অনেকটাই পিছিয়ে। এর মাঝেই মহামারী কোভিড-১৯ এর ভয়াবহ ছোবল ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে বেসরকারি শিক্ষাখাতের গুরুত্বপূর্ণ এই কিন্ডারগার্টেন সেক্টর।
শ্রীবরদী উপজেলায় প্রায় ৬০ টির মধ্যে কিন্ডারগার্টেন চলমান এবং এসব বিদ্যালয়ে প্রায় সহ সহস্রাধিক শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত। এদের জীবনযাত্রা আজ বড় সংকটময়। ‘শিক্ষক’ নামের তকমা গায়ে লাগানোর কারণে এরা না মারছে ছোট-খাটো কোন পেশায় যুক্ত হতে না পারছে পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাভাবিক জীবন চালাতে।
দীর্ঘদিন এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র ও অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ। ধুলোবালিতে ও পোকমাকড়ে নষ্ট করে ফেলছে সব প্রয়োজনীয় নথিপত্রসমূহ। একদিন যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকত বিদ্যালয় আঙিনা আজ সেখানে ধূ ধূ বালুময় পরিবেশ আর শুধু শূন্যতা!
এই জনপদের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই ভাড়ায় পরিচালিত। যার ফলে প্রতিমাসে ভাড়ার টাকা ও বিদ্যুৎ বিলের খরচ যোগান দিতে দিতে অধিকাংশ মালিক পক্ষই নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন।
জুয়েল একাডেমিক স্কুলে পরিচালক এম.এ ছাত্তার বাবু বলেন, “ সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতি অনুগত থেকেই বলছি, আজ আমাদের উপার্জনের কোন পথ নেই। অতিদ্রæত আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। আমার প্রতিষ্ঠানটি ভাড়ায় চালিত। ভাড়ার টাকা গুণতে গুণতে আজ আমি সর্বস্বান্ত। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন জানাচ্ছি আপনি অতি দ্রুত আমাদের কিন্ডারগার্টেনগুলো খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করুণ।”
এ প্রসঙ্গে এইচ আর মডেল স্কুল এর পরিচালক হাফিজুর রহমান ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ এই সময়ে আমরা বড় অসহায়। আমাদের পাশে কেউ নেই। আমরা অত্যন্ত কষ্টকর ও মানবেতর জীবনযাপন করছি।”
এ. আর. কে. আইডিয়াল স্কুলের পরিচালক আব্দুর রেজ্জাক খোকন বলেন, “ আমরা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ধাপে ধাপে বেশ কয়েকবার বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করার কারণে আমরা নতুন কোন পেশাতেও যুক্ত হতে পারিনি। আমাদের এই চরম দুর্দিনে সরকারে সুদৃষ্টি কামনা করছি।”
জেড.এল. আর. এম স্কুল এর পরিচালক আলমগীর হোসাইন বলেন, ‘‘যেখানে সব সেক্টরের কার্যক্রম চলমান সেখানে শুধুমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ! এছাড়াও কওমি মাদ্রাসাগুলোও খুলে দেওয়া হয়েছে। জানিনা এ আমাদের কোন পাপের শাস্তি।”
লাইট ওয়ে একাডেমি এর সহকারী পরিচালক শাহীনুর রহমান লিটন বলেন, ‘‘ মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, যত শর্ত আছে আরোপ করুন তবুও আমাদের বিদ্যালয় খোলার ব্যবস্থা করে দিন। আমরা কর্ম করে বেঁচে থাকতে চাই, কারো করুণার পাত্র হয়ে নয়।”
হামিদুর রহমান নামের একজন অভিভাবক বলেন, “ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমাদের ছেলেÑমেয়ে গুলোর লেখাপড়া বাসায় একদমই হচ্ছেনা। এখন ভালোই বুঝতেছি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কী গুরুত্ব !
এছাড়াও এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদেরও একটাই দাবি বিদ্যালয় খোলার অনুমিত দিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো ডাল-ভাত খাওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান।
স্থানীয় অভিভাবক ও শিক্ষানুরাগীরাও মনে করেন, কিছু শর্ত আরোপ করে হলেও এইসব কিন্ডারগার্টেন সহ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।